পরবর্তী লক্ষ্য হয় ফান ম্যাগাজিন
উন্মাদ। যে বছর
বুয়েটে চান্স পাই, তার পরের
বছর বইমেলায় উন্মাদ-এর স্টলে গিয়ে
বলি, দরকার হলে মাথায় করে
উন্মাদ বিক্রি করব, তবু উন্মাদ-এ কাজ করতে
চাই। উন্মাদ-এর পাতায় ছাপার
অক্ষরে নিজের নাম দেখতে পেলেই
আমি ধন্য। ২০১০ সালে যখন
বাংলাদেশ ছাড়ি, তখন আমি উন্মাদ-এর অ্যাসোসিয়েট এডিটর।
আমি অভিনয় করতে খুব পছন্দ
করতাম। ‘স্বপ্ন’ নামে মঞ্চনাটকের একটা
ছোট দলও ছিল আমাদের।
এই সময় উন্মাদ-এর পক্ষ থেকে
একটা সুযোগ এল হুমায়ূন
স্যারের (হুমায়ূন আহমেদ)
বাসায় যাওয়ার। উনি আমাকে দেখে
বললেন, ‘কিছু মনে কোরো
না, ইউ হ্যাভ এ
ভেরি ইউনিক ফিজিক। আমেরিকা, রাশিয়ায় দেখা যায়, কিন্তু
আমাদের দেশে দেখা যায়
না। আমি ঈদের নাটক
শুটিং করব কালকে। যাবে
আমার সাথে নুহাশ পল্লী?’
আমি অভিনয় করলাম। সেবার ঈদে স্যারের পাঁচটি
নাটকের মধ্যে আমি অভিনয় করি
চারটায়! দুইটাতে আবার মূল চরিত্রে!
খুব শখ ছিল বাপ্পা
মজুমদার আমার লেখা একটা
গান করবেন। বুয়েটের এক কনসার্টে মঞ্চের
পেছনে ওনার সঙ্গে পরিচয়
হয়। উনি গাইলেন আমার
লেখা লিরিকে ‘নির্বাসন’ নামের গানটি। টিভিতে আরও অনেক কিছু
করা হলো—উপস্থাপনা, বিজ্ঞাপন,
স্কেচ কমেডি, রিয়েলিটি শো। টিভির পেছনেও
কাজ করতে শুরু করলাম।
কবিতার বইয়ের সংখ্যা বাড়ল। যুক্ত হলো জোকসের বই।
একটা সময় মনে হলো,
আমার অন্য কিছু করা
দরকার। একটু ঝুঁকিপূর্ণ কিছু।
না হলে আজীবন আফসোস
থেকে যাবে। ঠিক করলাম, চলচ্চিত্র
নির্মাণ বিষয়ে পড়তে যাব নর্থ
আমেরিকায়। তখন বিজ্ঞাপন সংস্থা
‘গ্রে’র কপিহেড হিসেবে
কাজ করি। আবেদন করলাম
বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোনোটাতেই চান্স পেলাম না। খুব মন
খারাপ হলো। চিন্তা করে
দেখলাম, চলচ্চিত্র বিষয়ে অভিজ্ঞতা বাড়াতে হবে। শুধু লেখা
বা অভিনয়ের অভিজ্ঞতা দিয়ে হবে না।
কিছু ছোট ছোট চলচ্চিত্র
বানালাম। আবার আবেদন করলাম
পরের বছর। সুযোগ পেলাম
কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায়।
ভ্যাঙ্কুভারে
পড়তে এসে বুঝলাম, হলিউড
ড্রিম যাকে বলে, তার
সুযোগ পাওয়াটা আসলে কতটা কঠিন।
প্রচুর নেটওয়ার্কিং লাগে। লাগে ভাগ্য, আর
অসম্ভব ধৈর্য। জানতে পারলাম, এখানে নিয়মিত শুটিং ইউনিটে কাজ পেতে হলে
পেশাজীবীদের ইউনিয়নের সদস্য হতে হয়। কিন্তু
স্থায়ী বসবাসের অনুমতি ছাড়া ইউনিয়নের সদস্যপদ
পাওয়া যায় না। আমার
কোনোটাই নেই।
ঠিক
করলাম, লাইভ অ্যাকশন শুটিংয়ে
কাজের বদলে অ্যানিমেশন বা
ভিজ্যুয়াল এফেক্টসের (ভিএফএক্স) ধারায় যাব। ভ্যাঙ্কুভারে এ
রকম প্রচুর স্টুডিও। ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে বেশ নতুন বলে
এখানে লোক নেওয়া হয়
ইউনিয়ন ছাড়াই।
তত দিনে আমি বেশ ভালো রেজাল্ট করে পাস করে ফেলেছি। শিক্ষানবিশি করেছি এনবিসি ইউনিভার্সালের শো স্যুটসে। বেশ কিছু শর্ট ফিল্মে কাজ করি প্রডিউসার হিসেবে। নিজের পরিচালনায় শর্ট ফিল্ম কিছু ফেস্টিভ্যালে গেছে। এই রেজুমে দেখিয়ে কানাডার বেশ বড় অ্যানিমেশন স্টুডিও বার্ডেলে প্রোডাকশন অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে পেয়ে গেলাম প্রথম চাকরি। প্রচণ্ড পরিশ্রম করতাম সেখানে। একটা কাজের দায়িত্বে থাকলে দশটা করে ফেলতাম। আমাকে অনেক ‘অড’ কাজ করতে হতো—কফি বানানো, ডিশ ধোয়া ইত্যাদি। এই অবস্থানে সবারই তা করতে হয়। আমি অড কাজগুলো অসম্ভব দ্রুতগতিতে করে ফেলতাম। তখন ওরা আমাকে প্রোডাকশনের কাজ দিতে বাধ্য হতো। প্রোডাকশনের পরিকল্পনায় সাহায্য করা থেকে শুরু করে আর্টিস্টদের কাজ বণ্টন করা, তাদের পে-রোল করা ইত্যাদি। আমি এত ভালো করে সব কাজগুলো করলাম যে আমাকে ওরা আর অড কাজ করতে বলত না।
মাত্র ছয় মাস প্রোডাকশন অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করার পরই প্রমোশন পেয়ে কো-অর্ডিনেটর হয়ে যাই। কিন্তু আমি তত দিনে ঠিক করে ফেলেছি নতুন ইন্ডাস্ট্রি এক্সপ্লোর করব। তখন অস্কার বিজয়ী স্টুডিও এমপিসি সমন্বয়কারী খুঁজছিল। রেজুমে জমা দিলাম। চাকরি হয়ে গেল সমন্বয়কারী হিসেবে।
ভিএফএক্সে সেই আমার যাত্রা শুরু। প্রথম প্রজেক্ট গেম অব থ্রন্স। আমি কল্পনাও করিনি এত বড় প্রজেক্টে আমি কোনো দিন কাজ করতে পারব। এমপিসিতেও প্রচণ্ড পরিশ্রম করি। কেউ অসুস্থ থাকলে তার কাজ আমি করে দিতাম, তা সে ডিপার্টমেন্টের ম্যানেজারই হোক বা আমার সহকারী অন্য কোনো সমন্বয়কারীই হোক। এর প্রতিদানও পাওয়া গেল। একই বছর একাধিক সিনেমায় কাজ করলাম। বছর শেষে আমাকে স্টাফ পজিশন দিয়ে সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর বানিয়ে দেওয়া হলো। আমি তখন ব্যাটম্যান ভার্সাস সুপারম্যানের পুরো প্রজেক্টের কো-অর্ডিনেটর। অনেক বড় প্রজেক্ট ছিল এটা। বিশাল বাজেট।
তত দিনে আমি বেশ ভালো রেজাল্ট করে পাস করে ফেলেছি। শিক্ষানবিশি করেছি এনবিসি ইউনিভার্সালের শো স্যুটসে। বেশ কিছু শর্ট ফিল্মে কাজ করি প্রডিউসার হিসেবে। নিজের পরিচালনায় শর্ট ফিল্ম কিছু ফেস্টিভ্যালে গেছে। এই রেজুমে দেখিয়ে কানাডার বেশ বড় অ্যানিমেশন স্টুডিও বার্ডেলে প্রোডাকশন অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে পেয়ে গেলাম প্রথম চাকরি। প্রচণ্ড পরিশ্রম করতাম সেখানে। একটা কাজের দায়িত্বে থাকলে দশটা করে ফেলতাম। আমাকে অনেক ‘অড’ কাজ করতে হতো—কফি বানানো, ডিশ ধোয়া ইত্যাদি। এই অবস্থানে সবারই তা করতে হয়। আমি অড কাজগুলো অসম্ভব দ্রুতগতিতে করে ফেলতাম। তখন ওরা আমাকে প্রোডাকশনের কাজ দিতে বাধ্য হতো। প্রোডাকশনের পরিকল্পনায় সাহায্য করা থেকে শুরু করে আর্টিস্টদের কাজ বণ্টন করা, তাদের পে-রোল করা ইত্যাদি। আমি এত ভালো করে সব কাজগুলো করলাম যে আমাকে ওরা আর অড কাজ করতে বলত না।
মাত্র ছয় মাস প্রোডাকশন অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করার পরই প্রমোশন পেয়ে কো-অর্ডিনেটর হয়ে যাই। কিন্তু আমি তত দিনে ঠিক করে ফেলেছি নতুন ইন্ডাস্ট্রি এক্সপ্লোর করব। তখন অস্কার বিজয়ী স্টুডিও এমপিসি সমন্বয়কারী খুঁজছিল। রেজুমে জমা দিলাম। চাকরি হয়ে গেল সমন্বয়কারী হিসেবে।
ভিএফএক্সে সেই আমার যাত্রা শুরু। প্রথম প্রজেক্ট গেম অব থ্রন্স। আমি কল্পনাও করিনি এত বড় প্রজেক্টে আমি কোনো দিন কাজ করতে পারব। এমপিসিতেও প্রচণ্ড পরিশ্রম করি। কেউ অসুস্থ থাকলে তার কাজ আমি করে দিতাম, তা সে ডিপার্টমেন্টের ম্যানেজারই হোক বা আমার সহকারী অন্য কোনো সমন্বয়কারীই হোক। এর প্রতিদানও পাওয়া গেল। একই বছর একাধিক সিনেমায় কাজ করলাম। বছর শেষে আমাকে স্টাফ পজিশন দিয়ে সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর বানিয়ে দেওয়া হলো। আমি তখন ব্যাটম্যান ভার্সাস সুপারম্যানের পুরো প্রজেক্টের কো-অর্ডিনেটর। অনেক বড় প্রজেক্ট ছিল এটা। বিশাল বাজেট।
সিনেমার ঠিক মাঝামাঝি এসে
যখন দুই সুপার হিরোর
লড়াই শুরু হয়, তখন
থেকে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত
পুরো কাজটা আমরা করি। কাজটা
এত চমৎকারভাবে শেষ হয় যে
এর পরে চাকরির অফার
চলে আসে। নিজে থেকে
কষ্ট করে খুঁজে আর
রেজুমে পাঠাতে হয় না।
আমি খুব চাচ্ছিলাম মারভেল
কমিকসের মুভিতে কাজ করতে। বিশেষ
করে ক্যাপ্টেন আমেরিকায়। ঠিকই মেথড
স্টুডিও আমাকে সেই সিনেমার জন্য
নিয়োগ দেয়। একে একে
এখানে আমি ক্যাপ্টেন আমেরিকা, সিভিল ওয়ার ও ডক্টর স্ট্রেঞ্জ-এ কাজ করি।
এই দুটি ফিল্ম এ
মুহূর্তে ২০১৬ সালের অস্কারে
ভিএফএক্স ক্যাটাগরির সংক্ষিপ্ত তালিকায় আছে। যদি নমিনেশন
পেয়ে যায়, গর্ব করে
বলতে পারব, অস্কার নমিনেটেড সিনেমার অংশ ছিলাম। এই
দুটি সিনেমায় কাজ শেষ করে
প্রমোশন পেয়ে প্রোডাকশন ম্যানেজার
হয়ে যাই গার্ডিয়ানস অব গ্যালাক্সি ভলিউম ২-এ। বর্তমানে এই
মুভিতেই কাজ করছি, যা
চলবে আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত।
সত্যি কথা বলতে কি,
এরপর ঠিক কী করব,
এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে ভিএফএক্স থেকে
একটু বিরতি নেওয়ার ইচ্ছা আছে। ইচ্ছা আছে
আবার অ্যানিমেশনে কিছুদিন কাজ করার বা
ভিডিও গেম ইন্ডাস্ট্রিটা একটু
খতিয়ে দেখার। হয়তো আবার স্কুলে
ব্যাক করব কোনো দিন।
ইচ্ছা আছে ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ে
একটা মাস্টার্স করব। আমার খুব
শখ বাংলাদেশে এসে স্ক্রিপ্টরাইটিং শেখানো।
আমি মনে করি টেলিভিশন
বা ফিল্মে এই জায়গাটায় আমাদের
দুর্বলতাটা সবচেয়ে বেশি। আমি জানি, এই
কাজটা আমি ভালো পারি।
তারপরও একটা মাস্টার্স থাকলে
আমার নর্থ আমেরিকাতেও কাজ
করতে সুবিধা হবে। কারণ, আমি
একই সঙ্গে এখানেও কাজ করতে চাই,
হলিউডের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সঙ্গে সিনেমা বানাব। দেশে এবং বিদেশে!
হ্যাঁ, সঙ্গে অন্যান্য লেখালেখিও করব। ইংরেজি কবিতা লিখছি। ইচ্ছা আছে সেই বইটা শেষ করার। কিছু কমিকস লেখার ইচ্ছা আছে, গ্রাফিক নভেল স্টাইলে। হয়তো সাহস করে উপন্যাসও লিখে ফেলতে পারি। বলা যায় না! আমাদের এত ছোট একটা জীবন। হাজারো কাজ করতে ইচ্ছা হয়। দেখি না কতটুকু পারা যায়। আমি এখন জানি আত্মবিশ্বাস যদি থাকে, তাহলে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবেই, তা সে উন্মাদ-এই হোক আর হলিউডেই!
No comments:
Post a Comment